Tuesday, 5 February 2019

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ মহাভারতে বর্ণিত বিভিন্ন রাজ্যের বর্তমান অবস্থান ...


মহাভারতে বর্ণিত বিভিন্ন রাজ্যের বর্তমান অবস্থান :

মহাভারত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।এটা যে শুধুই ধর্মগ্রন্থ তা কিন্তু নয়, এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মহাকাব্য ইতিহাস গ্রন্থ হিসেবে এটাকে  মর্যাদা দেওয়া হয়। মহাভারতের ইতিহাস কাল্পনিক বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে মহাভারতের শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর। আজ আমরা জানবো সেই শহরগুলির বর্তমান অবস্থান।

দ্বারকা: এটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিষ্ঠিত শহর , শহরটি  গুজরাটের পশ্চিম সীমায় অবস্থিত, বর্তমানেও এটা দ্বারকা নামে পরিচিত। তার দেহ রাখবার পর মূল দ্বারকা নগরী সমুদ্রের জলে প্লাবিত হয়। বর্তমানে জলধিমগ্ন দ্বারকা নগরীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যা বর্তমান অবস্থিত দ্বারকা থেকে বেশ খানিকটা আরব সাগরের নীচে।

উজ্জয়নী: উজ্জয়নী ছিল ভারতের বর্তমান উত্তর প্রদেশের প্রাচীন নাম  এই শহরটি ছিল নৈনিতাল জেলার কাশিপুরের নিকটে এখানেই  অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য  তার শিষ্য পাণ্ডবদের ধনুর্বিদ্যা শিখাতেন ,পাণ্ডুপুত্র ভীম এই শহরে শিবের মূর্তি স্থাপন করেছিলেন বলে অনেকে এই শহরকে জানতেন ভীমশঙ্কর বলে।

কুরুক্ষেত্র: কুরুক্ষেত্রের প্রচীন নাম সমস্ত পঞ্চক। মহাভারতের ঐতিহাসিক  কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ হয়েছিল এখানেই বর্তমানে  দিল্লীর উত্তরে হরিয়ানা প্রদেশের একটি জেলা থানেশ্বরের দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত। বর্তমানে এই জায়গা কুরুক্ষেত্র নামে পরিচিত ।

পুন্ড্রদেশ : রাজশাহী-দিনাজপুর-বগুড়া নিয়ে উত্তরবঙ্গ হল পুন্ড্রদেশ বগুড়ার মহাস্থাংড়ের প্রাচীন নাম পুন্ড্রনগর। উন্নত সভ্যতার সবকিছু রয়েছে সেখানে।

হস্তিনাপুর: মহাভারত আমলের আর এই মেরুতকেই বলা হতো হস্তিনাপুর। মেরুত ভারতের উত্তরপ্রদেশের একটি বিখ্যাত স্থান। এই শহরকে কেন্দ্র করে অনেক ঘটনা  বর্ণিত আছে মহাভারত। হস্তিনাপুর ছিল  কৌরব এবং পাণ্ডব উভয়েরই রাজধানী এর অবস্থান দিল্লীর পূর্বে মিরাটের নিকট, গঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে।

বানগঙ্গা: কুরুক্ষেত্র থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে এই শহর অবস্থিত।  মহাভারতে ভারতের প্রাচীন নগর হরিয়ানাকে বলা হত বানগঙ্গা। ভারতের তীর্থস্থানগুলোর মধ্যে হরিয়ানা অন্যতম। অনেক পর্যটক বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে  এখানে আসেন প্রতিবছর

গান্ধার: আফগানিস্তানের কান্দাহার হল প্রাচীন গান্ধার নগরী ,মহাভারতে বর্ণিত গান্ধার শহরটি সিন্ধু প্রদেশের সিন্ধু নদীর পশ্চিমতীরে অবস্থিত।গান্ধার শহরের রাজা সুবলের কন্যা ছিলেন ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী গান্ধারী সিন্ধুনদের পশ্চিম তীর হতে আফগানিস্তের অধিকাংশ অঞ্চলকে প্রাচীনকালে গান্ধার দেশ নামে ডাকা হত।

অঙ্গদেশ: শহরটি বর্তমান মুঙ্গের ভাগলপুর স্থানও|


শিবি দেশ: শিবি দেশ মহাভারতে ভারতের উত্তরের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ পাঞ্জাবকে বলা হত ঊষীণার এখানকার রাজা ছিলেন তার নাতি দেবিকাকে যুধিষ্ঠির বিয়ে করেছিলেন। ঊষীণারের সন্তান শৈব্য কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের সময় পান্ডবদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

তক্ষশীলা: তক্ষশীলা ছিল গান্ধার দেশের রাজধানীর নাম এই শহরের অবস্থান ছিল বর্তমানে  পাকিস্তানের রওয়ালপিন্ডিতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর পাণ্ডবরা যখন হিমালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করলেন তখন রাজা হিসেবে পরীক্ষিতের অভিষেক ঘটে। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি মারা যান সাপের কামড়ে বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পরীক্ষিত পুত্র জনমেজয় তক্ষশীলার দিকে নাগরাজকে পাঠান এবং সেই নাগরাজের আক্রমনে মারা যায় বহু সাপ

মাদ্রা দেশ: অবস্থান ছিল  বর্তমানে নেপাল এবং ভারতের একাংশে সেসময় শল্য মাদ্রা দেশের রাজা ছিলেন। হিমালয়ের দিকের উত্তরের দেশকে বলা হতো মাদ্রা দেশ। হস্তিনাপুরের রাজা পান্ডু তার বোন মাদ্রিকে বিয়ে করেন। মাদরি ছিলেন সহদেব এবং নকুল মাতা।

ইন্দ্রপ্রস্থ: ইন্দ্রপ্রস্থ শহরটি পান্ডবদের প্রতিষ্ঠিত একটি প্রসিদ্ধ শহর, প্রাচীনকালে এই শহরটি তৈরি করা হয়েছিল খান্ডব বন ধ্বংস করে দিল্লীর প্রাচীন নাম ইন্দ্রপ্রস্থ , বর্তমান দিল্লীতে এর ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। ডিসকভারী চ্যানেল ইন্দ্রপ্রস্থের উপর একটা সুন্দর প্রত্নতাত্ত্বিক ডকুমেন্টরি তৈরি করেছে

মগধ: মগধ প্রাচীন ভারতে ষোলটি মহাজনপদ বা অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। বর্তমান দক্ষিণ বিহারের প্রাচীন নাম। এই রাজ্য বর্তমানের বিহারের পাটনা, গয়া

নৈমিষারণ্য: উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর জেলায়  শহরটি  গোমতি নদীর তীরে অবস্থিত ,আধুনিক নাম নিমসার।
আর বাংলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল ষোলটি মহাজনপদের মধ্যে মগধ বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মগধের রাজধানী ছিল রাজগৃহ তারপর পাটলিপুত্র রাজধানি বানিয়ে গিয়েছিলো। রাজা বিম্বসার ছিলেন মগধের প্রথম ঐতিহাসিক রাজা। তিনি অঙ্গ দখল করেন।

 মৎস্যদেশ: তবে বর্তমান মৎস্যদেশ হিসাবে অনুমান করা হয়  জয়পুরের নিকট অঞ্চলকে ,বিরাট রাজার দেশ যেখানে পাণ্ডবেরা অজ্ঞাতবাসে ছিলেন। মতভেদ রয়েছে এর অবস্থান নিয়ে ।

পাঞ্চাল: পাঞ্জাব কে এই নামে ডাকা হত।হস্তিনাপুরের নিকটবর্তী স্থানও এর সাথে যুক্ত ছিল। পণ্ডিতগণের মতে দিল্লী থেকে উত্তর পশ্চিমে বিস্তৃত স্থান। যে দ্রৌপদীকে ঘিরে তৈরি মহাভারতের প্রেক্ষাপট তিনি ছিলেন পাঞ্চাল পাঞ্চালের রাজকন্যা ,তাই তাঁকে পাঞ্চালী বলা হত।



No comments:

Post a Comment