Tuesday, 26 April 2022

বাংলাদেশে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ, সুস্থ থাকতে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করবেন

বাংলাদেশে এই মূহুর্তে চলছে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এটি আরো অন্তত দুইদিন চলবে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই তাপদাহ কমবে না।


আবহাওয়াবিদ মোঃ শাহীনুল ইসলাম বলেছেন, ২৯শে এপ্রিলের আগে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। "২৯শে এপ্রিল দেশের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি হবে, কিন্তু সেটি একযোগে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম।"


ফলে শীঘ্রই গরমের তীব্রতা কমছে না বলে মনে করেন এই আবহাওয়াবিদ।


বাংলাদেশে ২০২১ সালের এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক দুই ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে তার আগের ২৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছিল।


কিন্তু গতকাল বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা এবং চুয়াডাঙ্গা এই তিনটি জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


তীব্র তাপপ্রবাহ কখন হয়?

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, কোন এলাকায় যদি তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাহলে তাকে বলে তীব্র তাপপ্রবাহ।


* গরমে অসুস্থতা থেকে রক্ষা পাওয়ার ১০ উপায়


* তীব্র দাবদাহ যেভাবে মৃত্যুরও কারণ হতে পারে


* তীব্র দাবদাহের মধ্যে যেভাবে নিজেকে সুস্থ রাখবেন


তাপমাত্রা যখন ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাকে বলে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে সেটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে।

কুকুর বলে গালি দেওয়ায় ৬ জনকে কামড়িয়ে জখম করলো কালাম

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, কোন জায়গার দৈনিক যে গড় তাপমাত্রা সেটি পাঁচ ডিগ্রি বেড়ে গেলে এবং পরপর পাঁচদিন তা চলমান থাকলে তাকে হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহ বলা হয়।


অনেক দেশ এ সংজ্ঞা নিজের দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক করে।


তীব্র গরমে অতিষ্ঠ প্রাণীকূলও, রাজশাহী চিড়িয়াখানায়


তীব্র গরমে মানুষের সাথে অতিষ্ঠ প্রাণীকূলও, রাজশাহী চিড়িয়াখানায়


তবে সার্বিকভাবে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে উঠলে শরীর নিজেকে ঠাণ্ডা করার যে প্রক্রিয়া সেটি বন্ধ করে দেয়।


যে কারণে এর বেশি তাপমাত্রা হলে তা যেকোন স্বাস্থ্যবান লোকের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।


'বিছানা আসবাব সব গরম হয়ে আছে'

চুয়াডাঙ্গায় গত তিনদিন ধরেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে।


চুয়াডাঙ্গা শহরের একজন বাসিন্দা উম্মে রোমানা।


তিনি বলছেন, গত তিন-চারদিন ধরেই তাপমাত্রা বেশি, এর মধ্যে গত দুইদিনে সে তীব্রতা অনেক বেড়েছে।


তিনি বলেন, "ভয়াবহ গরম। ঘরের বিছানা-বালিশ, আসবাবপত্র সব গরম হয়ে আছে। ঘরের যত ফ্যান আছে, সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান সব চালিয়েও আমরা একটু ঠাণ্ডা হতে পারছি না।"


বৃষ্টি মেয়ে সাইকেল

সহসা এমন বৃষ্টির দেখা মিলবে না-বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর


"আমার বাবা-মা রোজা রাখছিলেন, কিন্তু বাবা গরমের কারণে এখন দুইদিন ধরে রোজা রাখতে পারছেন না। এমনি সময় উনি দিনের বেলায় বাইরে যেতেন, কিন্তু এখন এই তীব্র গরমে সেটা যাচ্ছেন না," বলেন মিজ রোমানা।


তিনি আরো বলেছেন, বাড়ির সবাই শরীর জ্বালাপোড়া থেকে শুরু করে পানিশূণ্যতাজনিত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মুখে পড়েছেন।


একই অবস্থা রাজশাহী, পাবনা এবং যশোরেও।


তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস

বাংলাদেশে ২৪শে এপ্রিল থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে বলে বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।


রাজশাহী, পাবনা এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার বাইরে যশোরেও তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে।


এর মধ্যে ২৪শে এপ্রিল যশোরের তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ৪০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে।


খাবার পানির সংকট

গরমে খাবার পানির সংকট দেখা যায় অনেক জায়গাতে


আবহাওয়াবিদ মি. ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ থেকে মে মাসকে বছরের উষ্ণতম সময় ধরা হয়, এর মধ্যে এপ্রিল মাসেই তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে।


"ফলে এই সময়ে এই তাপমাত্রা একটু বেশিই থাকে, কিন্তু এ বছর দেখা যাচ্ছে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি এবং সেটি আরো কয়েকদিন চলবে," বলেন তিনি।


এই চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার জন্য মূলত জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেন আবহাওয়াবিদেরা।


আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, বরিশাল, পটুয়াখালী, দিনাজপুর, নীলফামারী ও রাঙ্গামাটি অঞ্চলসহ ঢাকা বিভাগ, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগের বাকি অংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং সেটি অব্যাহত থাকতে পারে।


ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলা হয়েছে, যদিও আর্দ্রতার কারণে বাস্তবে গরম ছিল আরো বেশি।


ঢাকা বিভাগের মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলায় তাপমাত্রা থাকবে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


নদীতে গোসল

তীব্র গরমে গোসলে শান্তি মেলে


সাধারণত এরকম সময়ে দিনের তাপমাত্রা রাতে কিছুটা কমে আসে, কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আপাতত সে সম্ভাবনা নেই। রাতেও তাপমাত্রা উষ্ণই থাকবে।


এ সময়ে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৮৫ শতাংশ থাকবে বলে বলা হচ্ছে।


মূলত বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে গরম বেশি অনুভূত হয়।


পরবর্তী তিনদিনেও আবহাওয়া সামান্যই পরিবর্তন হবে।


পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট এবং ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েকটি জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।


এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশ দেখা গেলেও আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে।


তাপপ্রবাহে সতর্কতা

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেড ক্রস এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর যৌথভাবে ২০২১ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করে, যার ফলাফলে দেখা গেছে ঢাকায় হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহের প্রবণতা বেড়েই চলেছে।


আর হিটওয়েভের কারণে বাড়ছে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়াসহ নানা ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি।


রোদ এড়িয়ে চলা

তীব্র রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বয়ষ্ক মানুষ, শিশু, গর্ভবতী, খেলোয়াড় এবং যারা বাইরে কায়িক পরিশ্রমের পেশার সাথে জড়িত তারা সবচাইতে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন তাপপ্রবাহের সময়।


সরাসরি সূর্যের নিচে যাদের কাজ করতে হয় তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাই তাপপ্রবাহের সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:


বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সময় যখন তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে সেই সময়টাতে বাইরের কাজ কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।

ঘরের ভেতরে বা ছায়া আছে এমন জায়গায় থাকার চেষ্টা করতে হবে।

প্রচুর পানি এবং তরল পানীয়- যেমন শরবত, ডাব, ফলের রস পান করতে হবে।

যতবার সম্ভব গোসল করুন।

বারবার মুখ ও শরীরে পানির ঝাপটা দিন।

যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হবে।

ঢিলেঢালা এবং বাতাস পরিবহনকারী পোশাক পরুন।

ঘরের বাইরে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

Sunday, 24 April 2022

কুকুর বলে গালি দেওয়ায় ৬ জনকে কামড়িয়ে জখম করলো কালাম

 কুকুর বলে গালি দেওয়ায় ৬ জনকে কামড়িয়ে জখম করলো কালাম

পটুয়াখালীর দুমকিতে কুত্তা (কুকুর) বলে গালি দেওয়ায় একই পরিবারের ৬ জনকে কামড়িয়ে জখম করেছে এক যুবক। ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার বিকালে উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ঝাঁটরা গ্রামে। অভিযুক্ত যুবকের নাম কালাম সরদার।

 কুকুর বলে গালি দেওয়ায় ৬ জনকে কামড়িয়ে জখম করলো কালাম

স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ঝাঁটরা গ্রামের বাসিন্দা কালাম সরদার বনাম আনোয়ার শিকদার গংদের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল।


শুক্রবার বিকালে কালাম সরদার বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় প্রতিবেশী বাবুল হাওলাদারের ১০ বছর বয়সি ছেলে তাকে (কুত্তা) কুকুর বলে গালি দেয়। এতে কালাম সরদার ক্ষুব্ধ হয়ে তার স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের লোকজন নিয়ে আনোয়ার শিকদার ও সাত্তার শিকদারের বসতঘরে অতর্কিত হামলা চালায়।

গার্লফ্রেন্ডের জন্য ১৪ বছর অটো চালান কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক 

এ সময় বাঁধা দিতে এলে ওই পরিবারের শিশুসহ ৬ জনকে কামড়িয়ে জখম করেন তারা। আহতরা হলেন মাসুদা বেগম (৫০), সুমাইয়া আক্তার (২০), ৬ মাসের শিশু রাইয়ান, শাকিল (১৪), লাভলী (২৭) এবং তাসমিম (১২)। আহতদের সবাই বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।


আনোয়ার শিকদারের স্ত্রী লাভলী বেগম অভিযোগ করে বলেন, পাশের বাড়ির একটা ছেলে কালাম সরদারকে গালি দিলে তিনি ক্ষিপ্ত হন। আর মনে মনে ধারণা করেন যে এটা আমরা ওই ছেলেকে শিখিয়ে দিয়েছি। তাই আমাদের বসতঘর ভাঙচুরসহ আমাদের ৬ জনকে কামড়িয়ে আহত করেছেন তিনি।


অভিযুক্ত কালাম সরদারের ভাতিজি মানসুরা আক্তার কামড়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের পূর্ব বিরোধ চলছে। শুক্রবার দু’পক্ষের মারামারি হয়েছে। তবে কামড়ের বিষয়টি বানোয়াট এবং কিছু দিন আগে আমার বাবা ও কাকাকে ওরা সন্ত্রাসী দিয়ে মেরেছে ও আমাদের জমি দখল করে নিয়েছে।


স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মিজান সরদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সালাম ও কালামের পরিবার অত্যন্ত খারাপ। এরা বিগত দিনেও মৌলভী আ. বারী, খালিদ হোসেন ও সোবহান সরদারকে কামড়িয়েছে।


দুমকি থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আবদুস সালাম বলেন, এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Friday, 22 April 2022

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ২০২২ ইং সকল প্রশ্ন সমূহ এবং সমাধান

 প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ২০২২ ইং সকল প্রশ্ন সমূহ এবং সমাধান 


 প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ২০২২ ইং সকল প্রশ্ন সমূহ এবং সমাধান সমূহ 






Saturday, 16 April 2022

এবার ঈদের রাতে গান শোনাবেন মাহফুজুর রহমান ...

দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান। এটি ছাড়াও তার আরেকটি পরচিয় তিনি একজন গায়ক। তবে তার গান নিয়ে দেশ জুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রলও করা হয়।

তিনি সব কিছু উপেক্ষা করে প্রতি বছরের ন্যায় এবারের রোজার ঈদেও গানের অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিষয়টি তিনি নিজেই গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করছেন। এটিএন বাংলা সূত্রে জানা গেছে, মৌলিক দশটি গান দিয়ে সাজানো হয়েছে ড. মাহফুজুর রহমানের অনুষ্ঠানটি। তিনি বলেন ‘ইতিমধ্যে গানের রেকর্ডিং হয়ে গেছে। ঈদের দিন রাত ১০টা ৩০ মিনিটে দিকে অনুষ্ঠানটি প্রচার হবে। সবাইকে দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

বাঙালি রীতিতে রণবীর-আলিয়ার বিয়ে দিল ভক্তরা ...

উল্লেখ্য, তিনি ২০১৬ সালের কোরবানি ঈদে গায়ক হিসেবে হাজির হয়ে হইচই ফেলে। এর পর থেকে প্রতিবছর দুই ঈদে তার একক গানের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়ে বেসরকারি চ্যানেল এটিএন বাংলায়

বাঙালি রীতিতে রণবীর-আলিয়ার বিয়ে দিল ভক্তরা ...

তারকাদের ভালোবেসে তাদের ভক্তরা কত পাগলামিই না করে। তারই যেনো আরও একটি প্রমাণ ঘটলো বলিউড তারকা রণবীর কাপুর ও আলিয়া ভাটের বিয়েকে ঘিরে। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) মুম্বাইয়ের বাস্তু আবাসনে ধুমধাম করে বিয়ে করেছেন এই জুটি। পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে পাঞ্জাবি রীতিতে বিয়ের পর্ব সেরেছেন তারা।



তবে এদিন বাঙালি রীতিতেও বলিউডের এই তারকা জুটির বিয়ে হয়েছে। যদিও কলকাতায় অনুষ্ঠিত এই বিয়ের বিষয়টি হয়তো কাপুর ও ভাট পরিবারের কেউ-ই জানেন না। কারণ বাঙালি প্রথায় রণবীর-আলিয়ার এই বিয়ের আয়োজন করেন তাদের একদল ভক্ত।

বলিউডের জনপ্রিয় জুটিদের মধ্যে অন্যতম রণবীর-আলিয়া। তাদের ভক্তদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। প্রিয় তারকার বিশেষ দিনটি নিজেদের মতো করে স্মরণীয় করতে চেয়েছিলেন একদল ভক্ত। তাই প্লাস্টিকের ডামিকে রণবীর-আলিয়া সাজিয়ে বিয়ে দেন তারা। বাঙালি বিয়ের সব রকম আয়োজনই করা হয়। ছেলে-বুড়ো থেকে সব বয়সের মানুষই এই প্রতীকী বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন।


প্রায় পাঁচ বছর প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন রণবীর ও আলিয়া। অনেকদিন থেকেই তাদের বিয়ের গুঞ্জন উড়ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি ও রণবীরের বাবা ঋষি কাপুরের মৃত্যুর কারণে বিয়ে হয়নি বলে জানা যায়। অবশেষে সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিয়ে করলেন এই জুটি।

Friday, 15 April 2022

আলিয়ার সঙ্গে রণবীরের বিয়ে নিতে পারছি না: দীঘি

সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন বলিউড অভিনেতা রণবীর কাপুর ও অভিনেত্রী আলিয়া ভাট। মুম্বাইয়ের কাপুরদের বান্দ্রার বাড়ি ‘বাস্তু’তে হয় এই জুটির বিয়ের অনুষ্ঠান। 

বিয়ের পরপরই ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন রণবীর-আলিয়া দম্পতি। বলিউডের হার্টথ্রব তারকা হওয়ায় বাংলাদেশেও তাদের ভক্তের অভাব নেই।



তাদেরই একজন হলেন দীঘি। এই অভিনেত্রী আলিয়া ভাটের সঙ্গে রণবীরের বিয়ে মেনেই নিতে পারছেন না। বলা যায় আলিয়া বিদ্বেষী দীঘি। বলছেন, ‘আলিয়ার সঙ্গে বিয়ের ছবি একদমই নিতে পারছি না। ওর (রণবীর) অন্য কোনো এক্সের সঙ্গে ক্যাটরিনা কিংবা দীপিকার সঙ্গে বিয়ে হলে সেটা মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু আলিয়াকে আমি আগে থেকেই নিতে পারি না।

’ রণবীরকে পছন্দের কথা জানিয়ে বলেন, ‘এখনো আমার ফোনের ওয়ালপেপারে রণবীরের ছবি দেওয়া। আমার মোবাইলে রণবীরের আলাদা একটি ফোল্ডারই রয়েছে। সেখানে সব রণবীরের ছবি। ’

চুক্তিভিত্তিক বিয়ের নামে লিভ-ইন সম্পর্কে জড়াচ্ছে সৌদিরা . . .

কষ্ট পেয়ে অনেকেই অনেক কিছু করে, দীঘিও করেছেন। তিনি খেয়েছেন সারা রাত পেস্ট্রি। দীঘির এমন আবেগী আলাপের মাঝে জানতে চাওয়া রণবীরের বিয়ের রাতে কী করলেন, ‘কষ্টে সারারাত পেস্ট্রি খেয়েছি। আগেই কিনে নিয়ে এসেছিলাম; এই কষ্টে কোন ডায়েট নেই।’ বললেন দীঘি।

ইমাম পরিচয়ে ২১ বছর পলাতক ছিল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি নেতা শফিকুল ...

জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি শফিকুল রহমান ওরফে শফিকুল ইসলাম ওরফে আব্দুল করিমকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল)  কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায় অভিযান চালিয়ে  তাকে গ্রেফতার করা হয়। শফিকুল রহমান ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এ ছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি।



তিনি ইমাম পরিচয়ে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে পলাতক ছিলেন। শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর কাওরান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ২০০১ সালের রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানাধীন বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহতের ঘটনায় তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। 

রমনা বটমূলে হামলার পর ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি গোপনে সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। অতঃপর ২০০৮ হতে নরসিংদীতে একটি মাদরাসায় অবস্থান করে আত্মগোপনে চলে যায়।

গার্লফ্রেন্ডের জন্য ১৪ বছর অটো চালান কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক

খন্দকার আল মঈন বলেন, শফিকুর রহমান নরসিংদী থাকাকালীন পরিচয় গোপন করে আব্দুল করিম নামে পরিচয় দিতেন। আব্দুল করিম নাম ব্যবহার করে তিনি ওই এলাকার চরে অবস্থিত একটি মসজিদে মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনে ইমামতির চাকরি নেন। ইমামতির আড়ালে তিনি মানুষকে ধর্মের নামে বিভ্রান্তিমূলক অপব্যাখ্যা দিতেন। অত্যন্ত কৌশলে মাঝে মাঝে ভিন্ন স্থানে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতেন। বিগত ২১ বছর এভাবেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন শফিকুল।


শফিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর মাদরাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকায় পড়াশোনা করেন। হেদায়া পাস করার পর ১৯৮৩ সালে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৮৬ সালে সেখান থেকে সাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) পাস করে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে ইউসুফ যিন নূরি মাদরাসায় ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হয়ে ৩ বছরের ইফতা (ফতোয়া) কোর্স সম্পন্ন করেন। ওই সময় করাচির নিউ টাউনে মুফতি হান্নানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই প্রতিষ্ঠানে মুফতি হান্নানও পড়াশোনা করতে যান।


শফিকুল ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানে অবস্থানকালীন আফগানিস্তানে চলে যান এবং তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করেন। ওই বছরের শেষের দিকে তিনি আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বাংলাদেশে আসার পর তিনি ঢাকার খিলগাঁওয়ে একটি মাদরাসায় পার্টটাইম শিক্ষকতা শুরু করেন।পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ভ্রমণে গেলে আফগানিস্তানে থাকাকালীন জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। 

আফগানিস্তান থেকে দেশে এসে ‘হরকাতুল জিহাদ, বাংলাদেশ’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা করেন। ১৯৯০ সালে দেশে ফেরত এসে সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ‘হরকাতুল জিহাদ, বি’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। 

Thursday, 14 April 2022

নরসিংদীতে মসজিদে শিশু কন্যাকে নেওয়ার জেরে সংঘর্ষ, এক জন নিহত ...

 তর্ক থেকে সহিংসতা শুরু হলে নরসিংদীর রায়পুরায় একজন নিহত হয়েছেন

 


নরসিংদীতে মসজিদে শিশু কন্যাকে নেওয়ার জেরে সংঘর্ষএক জন নিহত ,তর্ক থেকে সহিংসতা শুরু হলে নরসিংদীর রায়পুরায় একজন নিহত হয়েছেন

 

কন্যা শিশুকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ায় শুরু হওয়া তর্ক সংর্ষের জেরে বাংলাদেশের নরসিংদীর একটি গ্রামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে।

 

নরসিংদীর রায়পুরা থানার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে রবিবার।

 

ওই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

 

নরসিংদীর রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, বৃহস্পতিবার বাহাদুরপুর গ্রামের একটি মসজিদে স্থানীয় একজন ব্যক্তি তার শিশুকন্যাকে সাথে নিয়ে ইফতার করতে গিয়েছিলেন।

 

কন্যা শিশুকে মসজিদে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সেখানকার আরেকজন ব্যক্তির সঙ্গে তার তর্ক হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, এর জের ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

 

নোয়াখালীতে বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে শিশুকে গুলিতে ঝাঁঝরা করলো সন্ত্রাসীরা...

দুই পরিবারের সদস্যরা সেই সংঘর্ষে অংশ নেন।

 

এক পর্যায়ে গ্রামের আরো মানুষ এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

 

নিহতের পরিবার থানায় যে লিখিত অভিযোগ করেছে, সেখানে তারা লিখেছেন নিহত লালচান মিয়া সংঘর্ষে অংশ নেননি, তিনি শুধু সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করছিলেন।

 

এসময় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন।

 

সেদিন রাতেই তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

 

রবিবার দুপুরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় হয় লালচান মিয়ার।

 

ওই সংঘর্ষের পরদিন লালচানের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছিল।

 

ওসি আজিজুর রহমান জানাচ্ছেন, ঘটনায় ১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।

 

একজনকে তারা গ্রেপ্তার করেছেন।

 

গ্রামটির বহু মানুষ ঘটনার পর পালিয়ে আছে বলে জানা যাচ্ছে।

 

গত বছরের অক্টোবর মাসেই এই রায়পুরার পাড়াতলী ইউনিয়নের কাচারিকান্দি নামে একটি চরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন নিহত আর অন্তত ২০ জন আহত হয়েছিল।

নোয়াখালীতে বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে শিশুকে গুলিতে ঝাঁঝরা করলো সন্ত্রাসীরা

নিহত শিশুর বাড়িতে এলাকার মানুষের ভিড়।


বাংলাদেশের নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের হাজীপুর ইউনিয়নে বাবার সাথে থাকা চার বছরের শিশু খুনের ঘটনার লোমহর্ষক বিবরণ দিচ্ছেন এলাকাবাসী।

 

তারা বলছেন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা শিশুটির বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে শিশুটির দিকে ইট ছুঁড়ে মারে এবং শিশুটির বাবা প্রতিবাদ করলে শিশুটিকে টার্গেট করে গুলি করে।

 

সে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পর উপস্থিত কয়েকজনের সাথে সন্ত্রাসীদের বাদানুবাদ হয় এবং এর মধ্যে শিশু তার বাবাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি।

 

"পেছন থেকে আবার এসে সন্ত্রাসীরা শিশুটির বুক মাথা লক্ষ্য করে গুলি করে। একই সাথে তারা শিশুর বাবাকেও গুলি করে। গুলিতে শিশুটির মাথা ঝাঁঝরা হয়ে যায়," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। নিরাপত্তার কারণে তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

 

গুলি করার সময় বাচ্চাটি বাবার কোলে ছিল।

হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শাহ আজিম আজ বৃহস্পতিবার বেলা বারটার দিকে ওই শিশুটির বাড়িতেই ছিলেন।

 

চুক্তিভিত্তিক বিয়ের নামে লিভ-ইন সম্পর্কে জড়াচ্ছে সৌদিরা . . .

সেখান থেকেই বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন বুধবার বিকেলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বীভৎস ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত, কিন্তু কখনো তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না।

 

তিনি বলেন শিশুটির বাবার সাথে সন্ত্রাসীদের কোন বিষয় ছিলো না। সন্ত্রাসীরা একজনের দোকানে গিয়ে ঝামেলা করছিলো।

 

সেই দোকানেই বাচ্চাটি বাবার পাশে দাঁড়ানো ছিলো। শিশুর বাবা সন্ত্রাসীদের আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন।

 


এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে বাচ্চাটিকে ইট মেরে আহত করা হয়।

 

"এরপর তো বাচ্চাটাকে খুনই করে ফেলা হলো। এখানে সবাই জানে কারা করেছে। এদের অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ। কিন্তু কারও কোন মাথাব্যথা নেই," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মিস্টার আজিম।

 

যদিও বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহেদুল হক রনি বলছেন তারা তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এবং ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

 

স্থানীয় আরেকজন জানিয়েছেন শিশুর বাবা যে বাড়িতে বসবাস করছিলেন সেখানকার এক ব্যক্তির সাথে জমির মাটি কাটা নিয়ে আরেক ব্যক্তির বিরোধ চলছিলো।

সে বিরোধের জের ধরে আগেও হামলা করেছিলো একই সন্ত্রাসীরা।

 

পরে নিয়ে সালিশও হয়।

 

সে সালিশে শিশুটির বাবাও উপস্থিত ছিলেন।

 

"শিশুটিকে গুলি করার সময় সন্ত্রাসীরা তার বাবাকে বলেছে যে, তুই তো সেদিন ছিলি," বলছিলেন স্থানীয় একজন, যিনি তার নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

 

ওদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মাইজদি হাসপাতালে গুলিতে নিহত শিশুটির মৃতদেহের ময়না তদন্ত চলছিলো।

 

চেয়ারম্যান শাহ আজিম জানিয়েছেন ময়না তদন্তের পর মৃতদেহ এনে দাফন করা হবে।

 

গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশুটির বাবাও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

Thursday, 7 April 2022

ইসলাম অবমাননার অভিযোগ, পাকিস্তানের কায়দায় এবার বাংলাদেশে গ্রেপ্তার শিক্ষক

সুকুমার সরকার, ঢাকা: সম্প্রতি ইসলামের ‘অবমাননা’ করার অভিযোগে পাকিস্তানে খুন হন শিক্ষিকা। এহেন ঘৃণ্য অপরাধে জড়িত ছিল নিহতের সতীর্থ এবং ছাত্রীরাই। আগেও ধর্মের নামে সেদেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকেই। কার্যত সেই ঘটনারই ছায়া এবার বাংলাদেশে (Bangladesh)। স্কুলেরই এক কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইসলামের ‘অবমাননা’র দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক শিক্ষককে।

জানা গিয়েছে, শ্রেণিকক্ষে ইসলামের অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে হৃদয়চন্দ্র মণ্ডলকে। তিনি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক। ইসলাম ধর্মকে অবমাননার অভিযোগে গত ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মহম্মদ আসাদ বাদী হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই দিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২৩ মার্চ ও ৪ এপ্রিল আদালতে হৃদয়চন্দ্র মণ্ডলের জামিন চাওয়া হয়। তবে আদালত জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। গত বুধবার তাঁর মুক্তির দাবিতে ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়েরই এক শিক্ষক জানিয়েছেন, গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির বিজ্ঞান ক্লাস নিচ্ছিলেন হৃদয়চন্দ্র মণ্ডল। সেখানে একটি বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের তর্ক বাঁধে। ওই ঘটনার ভিডিও তৈরি করে পড়ুয়াদের কয়েকজন। বিষয়টি প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আলাউদ্দিনকে জানায় তারা। প্রধান শিক্ষক সেদিনই হৃদয়চন্দ্রকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন ও শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে বলেন। তবে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানান। এর পরদিন সকালে তাঁরা বিদ্যালয়ে এসে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

চুক্তিভিত্তিক বিয়ের নামে লিভ-ইন সম্পর্কে জড়াচ্ছে সৌদিরা . . .

এদিকে, শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ও টিপ পরায় শিক্ষিকা লতা সমাদ্দারকে লাঞ্ছনার ঘটনাসহ সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ে বুধবার উদ্বেগ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৮ বিশিষ্টজন। তাঁরা হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘আমরা হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। আর যে কিশোর ছাত্ররা মৌলবাদী চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে অপমান করে পুলিশে সোপর্দ করেছে, তাদের মধ্যে মানবিক চেতনার বিকাশ ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসনের যেসব ব্যক্তি এহেন কাজে সহযোগিতা ও ইন্ধন জোগাচ্ছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।”

চেচনিয়ার গণহত্যাকারী পুতিনের পক্ষে কেন চেচেন আর্মি? ...

ভ্লাদিমির পুতিনের প্রকাশ্য সমালোচনা করলে সমালোচনাকারী রাশিয়ার ভেতরেই থাকুন বা পালিয়ে রাশিয়ার বাইরে যেখানেই যান, সেখানেই তাঁর ‘দুর্ঘটনায়’ কিংবা ‘খাদ্যের বিষক্রিয়ায়’ কিংবা ‘দুর্বৃত্তের’ গুলিতে মারা যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

সেভাবেই ২০১৫ সালে মস্কোয় গুলি খেয়ে মরতে হয়েছিল পুতিনের কট্টর সমালোচক বরিস নেমেৎসেভকে। নব্বইয়ের দশকে বরিস ইয়েলেৎসিন সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তিনি ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি জনসভায় পুতিনবিরোধী আন্দোলনে জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। পথে তাঁর স্ত্রীর সামনেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন দুর্বৃত্তরা।


নেমেৎসেভ প্রভাবশালী রাজনীতিক ছিলেন। তাই তদন্ত করার বিষয়ে সরকারের ওপর জনগণের চাপ ছিল। এই হত্যায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। পাঁচজনের সবাই উত্তর ককেশাস অঞ্চলের বংশোদ্ভূত। এদের একজনের নাম জাউর দাদায়েভ।


রাশিয়ায় যখন উদারপন্থী ও পুতিনবিরোধীরা নেমেৎসেভের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন, ঠিক তখন এক চেচেন নেতা জাউর দাদায়েভকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিলেন। হত্যা করে দাদায়েভ কাজের কাজ করেছেন বলে তিনি বাহ্বা দিলেন। বললেন, দাদায়েভ রাশিয়ার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি মহান কাজ করেছেন।


এই বক্তব্য দেওয়ার পরদিনই পুতিন ওই চেচেন নেতাকে রাশিয়ার সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘অর্ডার অব অনার’ দেন। তিনি ‘হিরো অব রাশিয়া’ এবং ‘হিরো অব অনার’ শীর্ষক আরও দুটি রুশ পদক আগেই পুতিনের কাছ থেকে পেয়েছিলেন।


বিজ্ঞাপন

রমজান কাদিরভ: পুতিনের একজন ‘অ্যাটাক ডগ’

পুতিন ও রমজান, দুজনের মধ্যে কয়েক দশকের বোঝাপড়া রয়েছে।

পুতিন ও রমজান, দুজনের মধ্যে কয়েক দশকের বোঝাপড়া রয়েছে।ছবি: রয়টার্স

পুতিনের আশীর্বাদধন্য এই নেতার নাম রমজান কাদিরভ। তিনি রাশিয়ার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে থাকা চেচেন প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট। চেচনিয়ায় তাঁর কথাই শেষ কথা। ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনেক আগেই রমজান কাদিরভ নিজের একটি মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। বাহিনীটির নাম ‘কাদিরভৎসি’।


ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রমজান কাদিরভকে বাংলাদেশের মানুষ খুব একটা চিনত না। তবে রাশিয়া, ইউক্রেন, চেচনিয়া, দাগেস্তানসহ গোটা ককেশাস অঞ্চলে তাঁর নাম জানে না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।


পুতিন যেমন মার্শাল আর্ট চর্চা করেন, জুডো-কারাতেসহ নানা রকম শারীরিক কসরত করেন, দানবাকৃতির ভালুকের পিঠে চড়ে ছবি তোলেন, নানা ধরনের অ্যাডভেঞ্চার করতে ভালোবাসেন, রমজান কাদিরভও এসব পছন্দ করেন। তিনিও চিতা বাঘ কোলে নিয়ে ছবি তোলেন, কারাতের চর্চা করেন। পুতিনের এই যথার্থ ভাবশিষ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও একজন সেলিব্রিটি। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে কয়েক মিলিয়ন ফলোয়ার তাঁর। অবশ্য সম্প্রতি ফেসবুক তাঁর অ্যাকাউন্ট স্থগিত করেছে।


রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলা শুরু করার দুই দিন পরই রমজান সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর বাহিনী প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমর্থনে ইউক্রেনে অভিযানে যাচ্ছে। গত ১৪ মার্চ তিনি একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়েছিলেন। তাতে একটা বিশাল ঘরে অনেক চেচেন যোদ্ধার মধ্যে তাঁকে দেখা যায়। তিনি সেখানে বলেন, তাঁরা কিয়েভের খুব কাছে চলে এসেছেন। তাঁরা বহু ইউক্রেনীয় সেনাকে হত্যা করেছেন। পুতিন রমজান কাদিরভের বীরত্বে বিরাট খুশি। তিনি এই দফায় একধাক্কায় রমজানকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে দিয়েছেন।


কাদিরভের নেতৃত্বে চেচেন বাহিনী যে এই প্রথম রুশ সেনাদের সহযোগী বাহিনী হিসেবে যুদ্ধ করছে, তা নয়। এর আগে ২০০৮ সালে জর্জিয়ায়, ২০১৪-১৫ সালে ইউক্রেন সংঘাতের প্রথম দফায় এবং সিরিয়ার যুদ্ধে পুতিনের হয়ে কাদিরভৎসিরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন।


ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চেচেন যোদ্ধাদের ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধে লড়াই করতে দেখা যাচ্ছে। অনেক ভিডিওচিত্রে দেখা যাচ্ছে, চেচেন যোদ্ধারা লড়াই চলাকালে নামাজ পড়ছেন এবং রুশ সেনারা তাঁদের পাহারায় রয়েছেন।


চেচেনরা যোদ্ধারা কোন পক্ষে? গোলকধাঁধার প্রশ্ন

এসব দৃশ্য দেখে স্বাভাবিকভাবেই অনেকে ধন্দে পড়ে যাচ্ছেন। তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগছে, যে পুতিনের বাহিনী ১৯৯৯-২০০০ সালে দ্বিতীয় চেচনিয়ার যুদ্ধে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিকে প্রায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল; যে রুশ বাহিনী কয়েক লাখ চেচেন মুসলমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল এবং সেখানে ধর্ষণ, নির্যাতনসহ ইতিহাসের জঘন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছিল, আজ সেই পুতিনের জন্য, সেই রুশ বাহিনীর সঙ্গে একজোট হয়ে সেই চেচেনরা ইউক্রেনে যুদ্ধ করে যাচ্ছে কেন?


অন্যদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, রমজান কাদিরভের চেচেন বাহিনী এবং রুশ হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করতে ইউক্রেনে চেচেন ও তাতার মুসলমানদের আরেকটি দল লড়াই চালাচ্ছে। তার মানে রমজান কাদিরভের হয়ে যে চেচেনরা লড়াই করছেন, তাঁরাই একমাত্র চেচেন না। রমজান কাদিরভের চেচেন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে আরও অন্তত দুটি চেচেন গ্রুপ। তারা ইউক্রেনের পক্ষে লড়ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ইউক্রেনের হয়ে কেন লড়ছে তারা?


এই সব প্রশ্ন অনেকের মাথায় আসছে। এর জবাব দু-এক কথায় সম্ভব নয়। এর সম্পূর্ণ জবাব খুঁজতে আমাদের ফিরে যেতে হবে অষ্টাদশ শতকের ককেশাস অঞ্চলে। সেই সময়কার রাশিয়ার জার শাসনামলে।


স্বাধীন চেচনিয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মানসুর ও জার সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের গল্প

জার সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দ্য গ্রেট ও চেচেন নেতা শেখ মানসুর উসুরমা

জার সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দ্য গ্রেট ও চেচেন নেতা শেখ মানসুর উসুরমাছবি: সংগৃহীত

ইউরোপ আর এশিয়ার মাঝখান দিয়ে গেছে ককেশাস পর্বতমালা। এর এশীয় ভাগের পাদদেশে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, জর্জিয়া, চেচনিয়া, দাগিস্তান, ইংগুশেটিয়াসহ কয়েকটি দেশে হাজার বছর ধরে মুসলমানেরা বাস করে আসছে। সেই মুসলমানদের, বিশেষ করে চেচনিয়ার মুসলমানদের স্বাধীন হতে চাওয়া এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাদের বশ মানিয়ে রাখার এক সুদীর্ঘ রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের মধ্যে আজকের যাবতীয় জটিল প্রশ্নের জবাব নিহিত আছে।


রাশিয়ার অর্থোডক্স খ্রিষ্টান জার তৃতীয় পিটারকে বিয়ে করেছিলেন পোল্যান্ড থেকে আসা প্রিন্সেস সোফি। রোমান ক্যাথলিক সোফি অর্থোডক্স খ্রিষ্টান হওয়ার পর অর্থোডক্স চার্চের পক্ষ থেকে তাঁর নাম দেওয়া হয় ক্যাথরিন। তিনিই রাশিয়ার দ্বিতীয় ক্যাথরিন (ইতিহাসে যিনি ক্যাথরিন দ্য গ্রেট নামে পরিচিত। ১৭৬২ সালে বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই ক্যাথরিন স্বামী তৃতীয় পিটারকে কৌশলে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেই জার সম্রাজ্ঞী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেন। মাত্র ছয় মাস সম্রাট তৃতীয় পিটার ক্ষমতায় ছিলেন। সামরিক কর্মকর্তাদের হাত করে ক্যাথরিন তাঁকে সরিয়ে দেন। অভ্যুত্থানের সাত দিনের মাথায় ১৭৬২ সালের ১৬ জুলাই তাঁর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ক্যাথরিনই তাঁকে মেরে ফেলেন বলে ধারণা করা হয়।


ইতিহাসে এই প্রথম নারী জার (তাঁকে অবশ্য রাশিয়ায় অনেকে ‘ফেক জার’ বা ‘ভুয়া জার’ বলে থাকেন) ক্যাথরিন দ্য গ্রেট ক্ষমতায় এসেই সাম্রাজ্য বিস্তারে মন দেন। তাঁর রুশ বাহিনী গোটা উত্তর ককেশাস অঞ্চলের বিশাল এলাকা দখল করে সেখানে কঠোর শাসন জারি করে। তাঁর দুঃশাসনে চেচনিয়া, দাগেস্তান, ইংগুশেটিয়াসহ গোটা ককেশাস অঞ্চলের মুসলমানেরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তারা মুক্তির পথ খুঁজছিল। ঠিক এই সময় চেচনিয়ায় শেখ মানসুর উসুরমা নামের একজন আধ্যাত্মিক নেতার আবির্ভাব ঘটে। তিনি শেখ মানসুর নামে বেশি পরিচিত।


শেখ মানসুরের সঙ্গে আমাদের দেশের হাজী শরীয়তুল্লাহর মিল পাওয়া যায়। ঊনবিংশ শতকে হাজী শরিয়তুল্লাহ মক্কায় পড়াশোনা শেষ করে এসে যখন দেখলেন, বৃহত্তর ফরিদপুরসহ দক্ষিণবঙ্গের মুসলমানেরা ধর্মীয় কুসংস্কারে ডুবে গেছে, ইসলামের মৌলিক জ্ঞান থেকে তারা অনেক দূরে সরে গেছে, তখন তিনি তাদের ইসলামের মূল অনুশাসনে ফিরিয়ে আনতে ইসলামের ‘ফরজ’ বা অবশ্যপালনীয় অনুশাসন চর্চার ডাক দেন। তিনি বলেন, মুসলমানেরা যেন অন্তত অবশ্যপালনীয় ‘ফরজ’ ইবাদত থেকে বিচ্যুত না হয়। এটিকেই বলা হয় ‘ফরায়েজি আন্দোলন’। এই আন্দোলন জোরদার হলে তা প্রথমে জমিদারবিরোধী এবং ক্রমান্বয়ে তা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তথা স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়।


আরও পড়ুন

পুতিন কি ধর্মযুদ্ধে নেমেছেন?

পুতিন কি ধর্মযুদ্ধে নেমেছেন?

প্রায় একই ধরনের ঘটনা দেখা যায় শেখ মানসুরের বেলায়। তিনি চেচনিয়ায় জন্ম নিলেও শৈশবেই পড়াশোনার জন্য দাগেস্তান চলে গিয়েছিলেন। সেখানে নকশবন্দী তরিকার একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে ফিরে আসেন। চেচনিয়ায় ফিরে এসে তিনি লক্ষ করেন, চেচেন সমাজ অতিমাত্রায় অ্যালকোহল ও তামাক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। মুসলমানদের মধ্যে প্রাচীন প্যাগান সংস্কৃতির চর্চা এমনভাবে ঢুকে গেছে যে ইসলামের মৌলিক অনুশাসন থেকে তারা হারিয়ে যেতে বসেছে। তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে অ্যালকোহল ও তামাকবিরোধী আন্দোলন শুরু করলেন। 

প্রবলভাবে জনমত গঠনের কাজ শুরু হলো। সেটি আস্তে আস্তে একটি রাজনৈতিক আদলে রূপ নিতে শুরু করল। তিনি একপর্যায়ে গোটা উত্তর ককেশাস এলাকার মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করতে চেষ্টা করলেন।


ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের কানে এ খবর পৌঁছাল। তিনি বুঝতে পারলেন, এখনই শেখ মানসুরকে দমন করতে হবে। তিনি রাশিয়ার সেনা পাঠালেন। তত দিনে শেখ মানসুর চেচেনদের নেতা হয়ে উঠেছেন। ১৭৮৪ সালে তিনি চেচনিয়ার আমিরুল মুজাহিদিন হিসেবে স্বীকৃত হন। তিনি রুশদের শাসন থেকে উত্তর ককেশাস অঞ্চলকে মুক্ত করতে জিহাদ ঘোষণা করেন।


আরও পড়ুন

হ্যাঁ, ‘মিরাকল অব গড’ পুতিন ‘ধর্মযুদ্ধে’ নেমেছেন

হ্যাঁ, ‘মিরাকল অব গড’ পুতিন ‘ধর্মযুদ্ধে’ নেমেছেন

১৭৮৫ সালে ৫ হাজার রুশ সেনা শেখ মানসুরকে ধরে আনতে চেচনিয়ায় অভিযান চালায়। শেখ মানসুরের গ্রাম আলদির সব বাসিন্দার সব বাড়িঘর তারা পুড়িয়ে দেয়। এরপরই মানসুরের অনুসারীদের সঙ্গে কয়েক দফা লড়াই হয়। ১৭৯১ সাল পর্যন্ত শেখ মানসুরের বাহিনী রুশ বাহিনীর সঙ্গে বিপুল বিক্রমে লড়াই চালিয়েছিল। কিন্তু ১৭৯১ সালে অটোমান দুর্গ আনাপায় শেখ মানসুর রুশ সেনাদের হাতে বন্দী হন। সেখান থেকে তাঁকে সেন্ট পিটার্সবুর্গে চালান করে দেওয়া হয়। শেখ মানসুরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ১৭৯৪ সালে সিলসেবুর্গ দুর্গে বন্দী অবস্থায় শেখ মানসুর মারা যান। 


চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিতে বর্তমানে আখমাদ কাদিরভ স্কয়ার নামে যে ঐতিহাসিক চত্বর আছে, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সেটির নাম ছিল শেখ মানসুর স্কয়ার। উনিশ শতকে রুশ ঔপন্যাসিক ভি আই সাবিনোভ এবং ইংরেজ ঔপন্যাসিক ই স্পেন্সার শেখ মানসুরের জীবন নিয়ে দুটি উপন্যাস লিখেছিলেন।


বর্তমানে ইউক্রেনে যে দুটি চেচেন স্বাধীনতাকামী গ্রুপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবং ইউক্রেনের পক্ষে লড়ছে, তার একটির নাম শেখ মানসুর ব্যাটালিয়ন। এর নেতৃত্বে আছেন মুসলিম সেভেরোলভস্কি। আরেকটি চেচেন গ্রুপের নাম জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়ন। এই গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন আদম ওসমায়েভ। ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে এই দুই চেচেন গ্রুপ লড়াই করে যাচ্ছে। এই দুই গ্রুপে যেসব চেচেন যোদ্ধা রয়েছেন, তাঁরা সবাই চেচনিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রমজান কাদিরভের বিরোধী পক্ষ। তাঁরা চেচনিয়া থেকে পালিয়ে ইউক্রেনে আশ্রয় নিয়েছেন। ইউক্রেন সরকার এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়া ওসমান কাদিরভের বিরোধীরা তাঁদের আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে থাকে।


চেচেন সিংহ ইমাম শামিল ও দাগেস্তানি হাজি মুরাদের বীরত্ব

লেভ তলস্তয়ের উপন্যাস ‘হাজী মুরাদ’ এর ইংরেজি সংস্করণের প্রচ্ছদ

লেভ তলস্তয়ের উপন্যাস ‘হাজী মুরাদ’ এর ইংরেজি সংস্করণের প্রচ্ছদছবি: সংগৃহীত

১৮১২ সাল। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট এক লাখ সেনা নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করলেন। সেই আক্রমণ সামাল দিতে গিয়ে উত্তর ককেশাস এলাকার দিকে জার শাসকেরা নজর দিতে পারলেন না। এ সময় চেচেনরা শক্তি সঞ্চয় করে ফেলল। তাদের মধ্যে আবার স্বাধীনতার স্পৃহা জেগে উঠল। নকশবন্দী সুফি তরিকার ইমাম আশ শামিল অষ্টাদশ শতকের দিকে এই অঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে পুনরায় স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন শুরু করলেন।


ইমাম শামিলের বীরত্ব ও সাহসের কথা নিয়ে ককেশাস অঞ্চলে বহু গল্প প্রচলিত আছে। তাঁকে চেচনিয়া অঞ্চলের সিংহপুরুষ বলা হয়। রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর এই যুদ্ধে অন্যতম সহযোগী ছিলেন তাঁর নায়েব হাজি মুরাদ। দাগেস্তান থেকে আসা হাজি মুরাদের বীরত্বগাথা নিয়ে রুশ ঔপন্যাসিক তলস্তয়ের একটি বিখ্যাত উপন্যাস আছে। উপন্যাসটির নাম ‘হাজি মুরাদ’। পরবর্তীকালে অবশ্য ইমাম শামিলের সঙ্গে হাজি মুরাদের দ্বন্দ্ব বাঁধে।


যা হোক, ইমাম শামিলও শেষ পর্যন্ত লড়েও পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অটোমান সাম্রাজ্য তাঁকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সহায়তা দেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সহায়তা দেয়নি এবং ১৮৫৯ সালে শামিল আত্মসমর্পণ করেন। তখন জার দ্বিতীয় আলেকসান্দর ক্ষমতায়। শামিলকে সেন্ট পিটার্সবুর্গে আনা হয়। জারের সঙ্গে শামিলের দেখা হয়। জার তাঁকে কিয়েভের (আজকের ইউক্রেনের রাজধানী) একটি প্রাসাদে গৃহবন্দী করে রাখেন। সেখানে তাঁকে একজন বাদশাহের মর্যাদায় রাখা হয়। ১৮৬৯ সালে তাঁকে হজ করতে অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি হজে যান এবং মক্কায়ই তাঁর মৃত্যু হয়। জান্নাতুল বাকিতে ইমাম আশ শামিলকে দাফন করা হয়।


সোভিয়েত আমল ও স্তালিনের নিষ্ঠুরতা

১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে চেচনিয়া ও ইয়াঙ্গুশ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে সাইবেরিয়ায় তাড়িয়ে দেয় জোসেফ স্তালিনের সরকার।

১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে চেচনিয়া ও ইয়াঙ্গুশ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে সাইবেরিয়ায় তাড়িয়ে দেয় জোসেফ স্তালিনের সরকার।ছবি: সংগৃহীত

তবে চেচনিয়াসহ ককেশীয় অঞ্চলের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেমে থাকেনি। পাশাপাশি তাদের ওপর রুশদের অত্যাচারও চালু ছিল।জার শাসনের অবসানের পর এল সোভিয়েত আমল। ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের পর চেচনিয়াসহ আশপাশের এলাকা সোভিয়েতের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট নেতা জোসেফ স্তালিন মনে করতে শুরু করেন, চেচেন মুসলমানেরা হিটলারের পক্ষে কাজ করছে। এই সন্দেহের কারণে তিনি ১৯৪৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চেচনিয়া ও ইয়াঙ্গুশ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে (তাদের প্রায় সবাই ছিলেন মুসলমান) সাইবেরিয়ায় তাড়িয়ে দেন। ফেব্রুয়ারি মাসে সাইবেরিয়া অঞ্চলে তাড়িয়ে দেওয়া আর মৃত্যুর হাতে তুলে দেওয়া একই কথা। বরফের নিচে চাপা পড়ে সেখানে প্রায় দুই লাখ মুসলমানের মৃত্যু হয়। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত এসব মানুষকে নিজ ভূমিতে ফিরতে দেওয়া হয়নি।


অথচ জার্মান সেনাদের হটিয়ে দিয়ে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল রাত ১০টা ৪০ মিনিটে হিটলারের জার্মানির জাতীয়তার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ‘জার্মানিয়া’ নামের নারী মূর্তির ওপর উঠে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পতাকা টাঙিয়েছিলেন যে দুজন, তাঁরা ছিলেন ককেশীয় মুসলমান। তাঁদের একজনের নাম রাখিমজান কোশকারবায়েভ। তাঁর বাড়ি কাজাখস্তান। আরেকজন হলেন দাগেস্তানের আবদুল হাকিম ইসমাইলোভ। যা হোক, স্তালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৭ সালে নিকিতা ক্রুশ্চেভ চেচেনদের নিজ দেশে ফিরে আসার সুযোগ দেন।


প্রথম ও দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধ এবং পুতিন যুগের শুরু

সামনে চেচেন প্রেসিডেন্ট আখমাদ কাদিরভ, পেছনে পুত্র রমজান কাদিরভ। ২০০৪ সালের ৩০ জানুয়ারির ছবি।  

সামনে চেচেন প্রেসিডেন্ট আখমাদ কাদিরভ, পেছনে পুত্র রমজান কাদিরভ। ২০০৪ সালের ৩০ জানুয়ারির ছবি। ছবি: এএফপি

নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর চেচেনরা আবার স্বাধীনতার ডাক দেন। তাঁরা গণভোটের আয়োজন করে স্বাধীন দেশের ঘোষণা দেন। ১৯৯১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত বিমানবাহিনীর সাবেক জেনারেল জোখার দুদায়েভের নেতৃত্বাধীন অল-ন্যাশনাল কংগ্রেস অব দ্য চেচেন পিপল পার্টির সদস্যরা চেচেন-ইঙ্গুশ সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের সুপ্রিম সোভিয়েতের একটি অধিবেশনে আক্রমণ চালান। এ সময় সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির গ্রোজনি শাখার প্রধান ভিতালি কুৎসেঙ্কো নিহত হন, ফলে চেচেন-ইঙ্গুশ সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের সরকারের পতন ঘটে। পরের মাসে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দুদায়েভ বিপুল জনসমর্থন লাভ করে জয়লাভ করেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সরকারসমর্থিত প্রজাতন্ত্রটির অন্তর্বর্তী সরকারকে বহিষ্কার করেন। দুদায়েভ চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।


রাশিয়া এই স্বাধীনতার ঘোষণা মানতে পারেনি। তারা স্বাধীন চেচনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইতিহাসে এটিই প্রথম চেচেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধে রাশিয়া ভয়ংকর গণহত্যা চালায়।আরব নাগরিক সামির সালেহ আবদুল্লাহ আল সুয়াইল্লিম (যিনি ইবনুল খাত্তাব নামে বেশি পরিচিত) ও শামিল বাশায়েভ ওরফে আবু ইদরিশ নামক স্থানীয় মুজাহিদের নেতৃত্বে চেচেনরা ঘুরে দাঁড়ায়। এতে হাজার হাজার রাশিয়ান সেনার মৃত্যু ঘটে। রাশিয়ান বাহিনী ভয়াবহভাবে পর্যুদস্ত হয় এবং চেচেনদের সব শর্ত মেনে নিয়ে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।


১৯৯৬ সালে দুদায়েভ গুপ্তহত্যার শিকার হন। এরপরই স্বাধীন চেচনিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন সালিম খান এন্দারবায়েভ। সালিম খান চেয়েছিলেন, আশপাশের মুসলিম দেশগুলোও চেচনিয়ার অন্তর্ভুক্ত হোক। এই ভাবনা থেকে তিনি দাগেস্তানকে চেচনিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিলে রাশিয়া আবার চেচনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঘোষণা করেন। রাশিয়ার পক্ষে সেই যুদ্ধের দায়িত্ব যিনি নেন, তিনি হলেন আজকের রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।


১৯৯৯ সাল। দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে পুতিন ভয়ংকরভাবে চেচেনদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। পুতিন এবার ব্রিটিশদের পুরোনো পদ্ধতি অনুসরণ করে চেচেনদের মধ্য থেকে এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে খুঁজতে থাকেন যাকে অর্থ ও ক্ষমতা দিয়ে নিজের সহযোদ্ধাদের কাছে থেকে ভাগিয়ে আনা যাবে। সে রকম একজন তিনি পেয়েও গেলেন। তাঁর নাম আখমাদ আবদুল হামিদোভিচ কাদিরভ। তিনি আখমাদ কাদিরভ নামে পরিচিত।


প্রথম চেচেন যুদ্ধে আখমাদ কাদিরভ রুশবিরোধী নেতা ও চেচেন রিপাবলিক অব এসকেরিয়ার প্রধান মুফতি ছিলেন। পুতিন তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করলেন। আখমাদ স্বাধীনতাকামীদের পক্ষ ত্যাগ করে তাঁর দলবল নিয়ে রুশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিলেন। আখমাদের সহায়তা নিয়ে পুতিনের রুশ বাহিনী গ্রোজনির ওপর যেভাবে হামলা চালায়, তা চেচনিয়ার ইতিহাসের সমস্ত বর্বরতাকে ছাপিয়ে গেল। গোটা গ্রোজনিকে আক্ষরিক অর্থে ধ্বংস করা হলো। চেচেন স্বাধীনতাকামীরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হলেন। পুরস্কার হিসেবে ২০০০ সালে আখমাদ কাদিরভকে চেচেন প্রশাসনের প্রধান এবং ২০০৩ সালে রাশিয়ান ফেডারেশনভুক্ত চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁকে বসানো হলো। ২০০৪ সালের ৯ মে আখমাদ কাদিরভ চেচেন স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীদের হামলায় নিহত হন। এরপর ২০০৭ সালে তাঁর ছেলে রমজান কাদিরভ চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসলেন।


আমাদের এই অঞ্চলের মীরজাফরের সঙ্গে আখমাদ কাদিরভ আর মীরজাফরের পুত্র মীরনের সঙ্গে রমজান কাদিরভের মিল পাওয়া যায়। পুতিনের একান্ত বাধ্যগত হয়ে পিতা যে গদিতে বসেছিলেন, সেখানে এখন পুত্র রমজান বসেছেন। স্বদেশের স্বাধীনতাকামীদের দমন করে রাখার বিনিময়ে তিনি সহি-সালামতে গদিতে থাকতে পারছেন।


রমজানের উৎপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন

চেচেন গেরিলা আমিনা অকুয়েভা। ২০১৭ সালে তাঁকে কিয়েভে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যার পেছনে রমজান কাদিরভের হাত আছে বলে ধারণা করা হয়।

চেচেন গেরিলা আমিনা অকুয়েভা। ২০১৭ সালে তাঁকে কিয়েভে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যার পেছনে রমজান কাদিরভের হাত আছে বলে ধারণা করা হয়।ছবি: রয়টার্স

রমজান চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর রুশবিরোধী চেচেন স্বাধীনতাকামীদের ওপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে। তিনি তাঁর এবং পুতিনের সমালোচনাকারীদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করেন। আতঙ্কে স্বাধীনতাকামী চেচেনরা দেশ ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যান। এদের একটি বড় অংশ এখন ইউক্রেনের আশ্রয়ে আছে। কিন্তু বিরোধিতাকারীরা দেশ ছেড়ে পালালেও রমজানের হাত থেকে তাঁরা নিরাপদ নন। বিদেশে আশ্রয় নেওয়ার পরও গুপ্তঘাতকদের হাতে সমালোচকদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। চেচনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সালিম খান এন্দারবায়েভ পালিয়ে কাতারে আশ্রয় নিলেও পুতিন এবং রমজানের হাত থেকে তিনি রেহাই পাননি। ২০০৪ সালে দোহার একটি মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার সময় তাঁর গাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়। তিনি সেখানে মারা যান।


উমর ইসরাইলোভ নামের এক ব্যক্তি রমজানের দেহরক্ষী ছিলেন, যিনি পরে রমজানের সমালোচক হয়ে ওঠেন এবং প্রাণভয়ে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় পালিয়ে যান। কিন্তু ২০০৯ সালে সেখানে উমর গুলিতে নিহত হন। ২০১৭ সালে কিয়েভে চেচেন বংশোদ্ভূত ইউক্রেনের নাগরিক ও রুশবিরোধী আন্দোলনকর্মী আমিনা অকুয়েভার নিহত হওয়ার ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় হয়েছিল। ১৮ বছর বয়সে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়া এই নারী ছিলেন একজন শল্যচিকিৎসক। তিনি স্নাইপার হিসেবেও দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়নের সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর স্বামী আদম ওসমায়েভ এই ব্যাটালিয়নের প্রধান। তাঁরা রমজান কাদিরভকে হঠাতে স্বাধীনতাকামী চেচেনদের নিয়ে সশস্ত্র আন্দোলন করছিলেন। ইউক্রেন সরকারের পুলিশ বাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট ছিলেন আমিনা।


২০১৭ সালে কিয়েভে স্বামী আদম ওসমায়েভের সঙ্গে গাড়িতে করে বাসায় ফেরার সময় আমিনা আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। পরে তদন্তে দেখা যায়, রমজান কাদিরভের ভাড়াটে লোকই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।


চেচেনরা কয়েক ভাগে বিভক্ত

রাশিয়া ও রমজান কাদিরভের বিরুদ্ধে লড়াইরত জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়নের প্রধান ও কিয়েভে গুলিতে নিহত স্নাইপার আমিনা ওকুয়েভার স্বামী আদম ওসমায়েভ। 

রাশিয়া ও রমজান কাদিরভের বিরুদ্ধে লড়াইরত জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়নের প্রধান ও কিয়েভে গুলিতে নিহত স্নাইপার আমিনা ওকুয়েভার স্বামী আদম ওসমায়েভ। ছবি: সংগৃহীত

সব মিলিয়ে চেচেনরা কয়েক ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে রমজানের কাদিরভের অনুসারী। আরেক ভাগ ইউক্রেনে সক্রিয় শেখ মানসুর ব্যাটালিয়নে এবং আরেক ভাগ জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়নে সক্রিয়।

রমজান কাদিরভ ইউক্রেনে সক্রিয় আল মানসুর ও জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়নকে শেষ করে দিতে চান। এতে তাঁর দুই দিক থেকে লাভ। প্রথমত, নিজের শত্রু শেষ হবে। দ্বিতীয়ত, এতে পুতিন খুশি হবেন। কারণ ওই দুটি ব্যাটালিয়নের চেচেন যোদ্ধারা চেচনিয়ার স্বাধীনতা চান এবং তাঁরা পুতিনের বিরুদ্ধে কাজ করছেন।


ইউক্রেনের চেচেনদের অবস্থা

জুলিয়াস স্ট্রস ডেইলি ‘টেলিগ্রাফ’–এর সাবেক মস্কো ব্যুরো প্রধান। এই সাংবাদিক চেচনিয়া, বসনিয়া, কসোভো, আফগানিস্তান এবং ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে সেখান থেকে অসংখ্য রিপোর্ট করেছেন। গত ২০ মার্চ লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক ‘দ্য স্পেকটেটর’-এ তাঁর একটা বড় লেখা ছাপা হয়েছে। লেখাটির শিরোনাম ‘পুতিন অ্যান্ড দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড’।


জুলিয়াস স্ট্রস এই প্রতিবেদনে বলছেন, ইউক্রেনের বেশির ভাগ মানুষের ভাষা রুশ এবং তারা রাশিয়ানদের মতোই অর্থোডক্স খ্রিষ্টান। তারা অনেকেই অনেকের আত্মীয়। এই জ্ঞাতি ভাইদের ওপর গুলি চালাতে রুশ সেনাদের হাত কাঁপতে পারে। কিন্তু রমজানের চেচেন যোদ্ধাদের সে ধরনের মানসিক বাধা নেই। তাই তাঁরা কোনো ধরনের অপরাধবোধ ছাড়াই ইউক্রেনবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন।


মস্কো বলেছে, রমজানের সেনাদের মাসে আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত বেতন দেওয়া হচ্ছে। এখানে রমজানের বাহিনীর লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার পেছনে আদর্শিক ব্যাপার নেই বললেই চলে। এখানে তাঁরা ভাড়ায় খাটা মজুরের মতো লড়াই করছেন।


তবে শেখ মানসুর ব্যাটালিয়ন ও জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়ন লড়ছে আদর্শিক কারণে। তারা চায় রমজানের পতন। তারা চায় পুতিনের পতন। তারা চায় চেচনিয়ার স্বাধীনতা। এ কারণে চেচেনদের একদল পুতিনের পক্ষে, আরেক দল ইউক্রেনের পক্ষে।